প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা। এর আয়তন ৬১১৬ বর্গকিলোমিটার , জনসংখ্যা ৫,২৫,১০০ জন এবং উপজেলা ১০ টি। এ উপজেলার মধ্যে তিনটি উপজেলার সাথে সদর উপজেলার সড়ক পথে যোগাযোগ ও বাকী ৬ টি উপজেলার সাথে জলপথে যোগাযোগ আছে। এসব এলাকায় জনগণের বসবাস বেশ কষ্টসাধ্য। কিন্তু এলাকার জনগণের উন্নয়ন এবং পশুসম্পদের বিকাশের স্বার্থে পশুসম্পদ বিভাগ , রাঙ্গামাটি তার নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছে। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জেলার পশু সম্পদ বিভাগ গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এ বিভাগ ১৯৯৩ সালের ১১ নভেম্বর তারিখে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় ও নিয়ন্ত্রণে হস্থান্তরিত হয়েছে। এ বিভাগের ১০ টি উপজেলায় ১০ টি উপজেলা পশুসম্পদ অফিস , ০১ টি ইউনিয়নে অফিস/ চিকিৎসা কেন্দ্রের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। অত্র এলাকার পশুপাখির চিকিৎসা সেবা , টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিষেধক ব্যবস্থা জোড়দারকরণ, উন্নতপরামর্শ, পশু- পাখীর প্রভূত জাত উন্নয়ন, আধুনিক কারিগরী এবং লাগসই কলাকৌশল প্রশিক্ষণ প্রদান এবং বিভিন্ন সম্প্রসারণ কাজে পশুসম্পদ দপ্তর, রাঙ্গামাটি নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
কার্যক্রমঃ গরু, ছাগল,শুকর, হান্স- মুরগী প্রভূত খামার স্থাপনের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে অত্র দপ্তর সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে । জাতীয় পশুসম্পদ উদ্দ্যোক্তা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গবাদি পশু মোটাতাজা করণ, ব্রয়লার ও লেয়ার মূরগী পালন, ছাগল পালন ও বকনা পালন প্রভূতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। তাছড়া পোল্ট্রি সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট এর অধীনে ব্রয়লার ও লেয়ার মূরগী পালনের প্রশিক্ষণ ও প্রদান করা হয়।
প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনাঃ
এসব কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মূখীন হতে হয় । যেমন- পর্যাপ্ত জনবলের অভাব, ১০ উপজেলার মধ্যে বেশিরভাগ উপজেলায় কোন কর্মকর্তা নেই, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা,যানবাহন অভাব, আর্থিক সুযোগ সুবিধার অভাব ইত্যাদি । এ পার্বত্য জেলায় অনেক পাহাড় ও জলাশয় অনাবাদী অবস্থায় পড়ে আছে । জুরাছাড়ি, লংগদু, বাঘাইছড়ি, নানিয়ারচর, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার সাপছড়ি এসব এলাকায় বিস্তির্ণ জলাশয় হাঁস পালনের জন্য বিশেষভাবে উপোযোগী। এসব জলাশয়কে নির্দিষ্ট প্রকল্পের অধীনে ব্যবহার করতে পারলে অধিকাংশ দরীদ্র জনগোষ্টীর আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে । সম্প্রতি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদর উপজেলার সাপছড়ি, কুতুকছড়ি এবং মানিকছড়ি ইউনিয়নে ১০ লক্ষ্য টাকা ব্যয়ে দুগ্ধজাত গাভী খামার এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ।
জনবলঃ
মোট জনবল ১৩৪ জন, তন্মধ্যে ২৩ জন কর্মকর্তা এবং ১১১ জন কর্মচারী ।
পশুসম্পদ বিভাগের অধীনে আরো দুটি উপ-বিভাগ রয়েছে । সেগুলো হলঃ- হান্স- মুরগীর খামার ও শুকর খামার । নিম্নে এদের বিবরণ দেওয়া হলঃ
১) সরকারী হাস- মুরগীর খামারঃ বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে প্রায় প্রতিটি পরিবারই হাস মুরগী পালন করে। তবে এর বেশীর ভাগই অনুন্নত দেশী জাতের । এ সমস্ত হাস মুরগীর উৎপাদন খমতা খুবই কম। অপরদিকে এ জনবহুল দেশে অপুষ্টি, দারিদ্র এবং বেকার সমস্যা খুবই প্রকট । বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে উন্নত জাতের হাঁস-পালন করে এ জনবহুল দেশের প্রাণীজ আমীষ জাতীয় খাদ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ করা, অপুষ্টি দূর করা, বেকার সমস্যার সমাধান করা সম্ভব । এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকারী হাস-মুরগী খামার স্থাপিত হয়েছে । সরকারী হাস-মুরগী খামার হতে উৎসাহী খামারীগণের স্বল্পমূল্যে উন্নত জাতের মুরগী, মুরগীর বাচ্চা, উর্বর ডিম সংগ্রহ করে ছোট ছোট বা পারিবারিক খামার স্থাপনের সুযোগ রয়েছে ।
১৯৭৭ সনে রাঙ্গামাটি শহরের আসামবস্তিতে '' হাঁস প্রজনন খামার, কাপ্তাই '' স্থাপিত হয় এবং ১৯৮২ সনে এ খামারটি '' সরকারী হাস-মুরগী খামার, রাঙ্গামাটি ’’ নামে রুপান্তরিত হয়েছে । ১৯৯৩ সনের ২১ শে নভেম্বর ড় খামারটি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় ও নিয়ন্ত্রণে হস্থান্তর করা হয়। এ খামারে ১০ টি হাস-মুরগী শেড আছে যার আয়তন ১১৮২ বর্গমিটার। এলাকার হাঁস-মুরগী উন্নয়নের জন্য এ খামারে, প্রতি বছর ৬০ থেকে ৭০ হাজার হাস-মুরগীর বাচ্চা পালন করে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করা হয় । আঞ্চলিক হাস-মুরগী খামার চট্টগ্রাম হতে একদিনের মুরগীর বাচ্চা এবং কেন্দ্রীয় হাস-মুরগীর খামার, নারায়ণগঞ্জ হতে একদিনের হাঁসের বাচ্চা এ খামারে সরবরাহ করা হয় । এ খামারে এ সমস্ত বাচ্চা প্রতিপালন করে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করা হয় ।
জনবলঃ ২ জন কর্মকরতা এবং ১৪ জন কর্মচারী নিয়ে সরকারী হাস-মুরগীর খামারের ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হয়ে আসছে।
২) পিগ ফার্মঃ পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী পাহাড়ী উপজাতীয় । কৃষি কাজের পাশিপাশি পশুপালন তাদের নিত্য নৈমিত্তিক কাজ । বিশেষ করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ব্যাক্তিগত শখ হিসেবে পশুপালনের কাজটি এরা বেছে নিয়েছে। অত্র এলাকার জনগণের প্রিয় খাদ্য শূকরের মাংস । শূকরের মাংস উত্পাদন খরচ কম , অল্প সময়ে বেশি উৎপাদন এবং সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এ মাংসের প্রচলন রয়েছে। এক কথায় যদি পাহাড়ী উপজাতীয় জনসাধারণের শূকরের মাংস মাথাপিছু উৎপাদন বৃদ্ধি পায় তাহলে তা জাতীয় মাংস উৎপাদনের হারের সহিত যোগ হবে ।
অত্র জেলায় প্রায় হাজার হাজার শূকর রয়েছে । কিন্তু তাদের জাত অনুন্নত । এমনকি তাদের পালন পদ্ধতি বিশেষ করে পারিবারিক ও বাণিজ্যিক ভাবে শূকর পালনের উপর কোন ধারণা নেই বললে চলে । তাই সরকার অত্র এলাকায় ১৯৮১ এং সনে এ পিগ ফার্মটি স্থাপন করেন । অনেক কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা স্বত্ত্বেও এ খামারটি এখন পর্যন্ত পরিচালিত হচ্ছে । এ খামারের উন্নত জাতের শূকরের বাচ্চা নির্ধারিত মূল্যে জনসাধারণের নিকট বিক্রি করা হয় । এ গুলো নিয়ে তাঁরা তাদের শূকরের সাথে প্রতিপালন করে দেশি জাতকে উন্নত করে । তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে চাহিদা অনুযায়ী নানাবিধ কারিগরী জ্ঞানপ্রদান করা হচ্ছে । আশা করা যাচ্ছে এতে জনসাধারণ বিভিন্ন উপায়ে শূকর পালনে উপকৃত হচ্ছেন ।
উল্ল্যখ্য , ১৯৯৩ সনের ২১ নভেম্বর জেলা পিগ ফার্মটি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণে ও ব্যবস্থাপনায় ন্যস্ত করা হয় ।
জনবলঃ একজন কর্মকর্তা এবং ১১ জন কর্মচারী নিয়ে জেলা পিগ ফার্মটি পরিচালিত হয়ে আসছে ।